সমুদ্র ‘ধারণার চেয়েও বেশি’ তাপ শোষণ করছে
ডিটেকটিভ প্রযুক্তি ডেস্ক
গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বের সমুদ্রগুলো যে পরিমাণ তাপ শুষে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তাতে গুরুতর গলদ আছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষকরা বলছেন, ধারণার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি তাপ সমুদ্রের পানিতে মিশে আছে।
জার্নাল নেচারে প্রকাশিত নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ¦ালানি নিঃসরণজনিত কারণে পৃথিবীর ঝুঁকির মাত্রাও ধারণার চেয়ে বেশি বলে উঠে এসেছে, খবর বিবিসির।
গবেষকরা এখন বলছেন, চলতি শতকের জন্য বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার যে নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন, সমুদ্রের এ বাড়তি তাপ শোষণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে ওই নিরাপদ মাত্রার নিচে ধরে রাখা কঠিন হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) সর্বশেষ পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল, গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে আটকে থাকা বাড়তি তাপের ৯০ শতাংশই সমুদ্র শুষে নেয়।
যদিও নতুন এ গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আড়াই দশকে প্রতিবছর সমুদ্রগুলো যে পরিমাণ তাপ শোষণ করেছে, তা বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তাপের প্রায় ১৫০ গুণ। এটি আগের ধারণার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি।
সাধারণত মানুষের বিভিন্ন কর্মকা-ে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হয়, সেগুলোর উৎপাদিত বাড়তি তাপ যোগ করেই বিশ্বের উষ্ণতা সম্বন্ধে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এ গবেষণা কেবল সমুদ্রেরই বেশি তাপ শোষণের তথ্য জানাচ্ছে না, মানুষের নিঃসরিত উষ্ণ গ্যাস যে আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি তাপ উৎপন্ন করছে, তাও বোঝাচ্ছে।
একই পরিমাণ গ্যাস থেকে বেশি তাপ পাওয়ার অর্থ হচ্ছে- পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে ধারণা চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে।
তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠা আটকাতে মানুষের কর্মকা-জতিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ধারণার চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি কমাতে হবে, বলছেন গবেষকরা।
সমুদ্রের এ অধিক তাপ শোষণের কারণে সেখানকার পানি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন বেশি নির্গত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ভয়াবহ ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লরে রেসপ্লেনডি।
“উষ্ণ সমুদ্র কম অক্সিজেন ধরে রাখে, যার প্রভাব পড়ে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানে। এরপর আছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, আপনি যদি সমুদ্রকে বেশি উষ্ণ করেন, তাহলে এর তাপস্ফীতি বাড়তে থাকবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়বে,” বলেছেন তিনি।
অনেকদিন পর বায়ুম-লের তাপমাত্রা হ্রাস পেলে সমুদ্র এ বাড়তি উষ্ণতা ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
“সত্যিটা হচ্ছে, সমুদ্র এখন যে পরিমাণ তাপ ধরে রাখছে তা বায়ুমন্ডলে স্থানান্তরিত হলে আমাদের পক্ষে ভবিষ্যতে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার নিচে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে,” বলেন রেসপ্লেনডি।
তাদের এ গবেষণার ফলে অন্য বিজ্ঞানীরাও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“গবেষকদের এ বিষয়ে বেশ সুখ্যাতি আছে, যে কারণে একে বেশ বিশ্বাসযোগ্যই মনে হচ্ছে,” বলছেন যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটনে অবস্থিত ন্যাশনাল ওশেনগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক সিবরেন দ্রিজফৌট।
তবে এখনি সমুদ্রের বাড়তি তাপ শোষণের বিষয়টিকে চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নিতে চান না অনেক গবেষকই; এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।